পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
আষাঢ়ের শুরুতেই সিলেট, সুনামগঞ্জসহ উত্তরাঞ্চলে ব্যাপক বন্যা দেখা দিয়েছে। মাস দুয়েক আগেও এসব এলাকা বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়। গত দুইদিন ধরে ভারতের আসাম-মেঘালয়ের প্রচুর বৃষ্টিপাত ও পাহাড়ি ঢল ফের বন্যার সূচনা করেছে। বিশ্বের সবচেয়ে বেশি বৃষ্টিপ্রবণ মেঘালয়ের চেরাপুঞ্জিতে শুক্রবার দুপুর পর্যন্ত ৯৭২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে, যা বিগত ১২২ বছরের মধ্যে তৃতীয় সর্বোচ্চ বলে জানিয়েছে ভারতের আবহাওয়া অধিদফতর। এই বৃষ্টির পানি সিলেট বিভাগকে ডুবিয়ে দিয়েছে। বিভাগের ৮০ শতাংশ এলাকা ডুবে গেছে। সুনামগঞ্জের ৯০ শতাংশ ডুবেছে। আবহাওয়াবিদরা বলেছেন, মৌসুমী বায়ু হঠাৎ করে হিমালয়ের উঁচু পাহাড়গুলোতে আছড়ে পড়ে ভারী বৃষ্টি তৈরি করছে। বাংলাদেশের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মেঘালয় ও আসামে বৃষ্টি হলে বাংলাদেশে উজান থেকে পানি আসা বন্ধ হবে না। সিলেট বিভাগের বন্যা পরিস্থিতির দ্রুত উন্নতির আশা নেই। উত্তরাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতি আগামী কয়েক দিনের মধ্যে আরও অবনতির আশঙ্কা রয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশের একটি অঞ্চলের ৮০ ভাগ এলাকা ডুবে যাওয়ার মতো বন্যা এর আগে হয়নি। এদিকে সিলেট, সুনামগঞ্জের পাশাপাশি ১২টি জেলা বন্যাকবলিত হয়েছে। মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, নেত্রকোনা, শেরপুর, ময়মনসিংহ, জামালপুর, নীলফামারী, লালমনিরহাট, রংপুর, কুড়িগ্রাম ও ভোলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। লাখ লাখ মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। হঠাৎ ভয়াবহ বন্যায় ঐসব অঞ্চলের মানুষ হতবিহ্বল ও অসহায় হয়ে পড়েছে। যে যেভাবে পারছে উঁচু স্থানে আশ্রয় নেয়ার চেষ্টা করছে। অনেকে ডুবে যাওয়া ঘরের চালে আশ্রয় নিয়েছে। ফসলাদি, গবাদিপশু ভেসে গেছে। যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। নদীভাঙন তীব্র হয়ে উঠেছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, মসজিদ, স্থাপনা তলিয়ে গেছে। গ্যাস-বিদ্যুতের সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। খাদ্য, বিশুদ্ধ পানি ও ওষুধের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। সিলেটের বিমানবন্দরের রানওয়ে ডুবে গেছে। এসএসসি পরীক্ষা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ হয়ে গেছে। ইতোমধ্যে বন্যায় ডুবে দুজনের মৃত্যু হয়েছে। এক মানবিক বিপর্যয়কর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।
যত দিন যাবে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হতে পারে বলে আবহাওয়াবিদরা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। এবারের বন্যার যে আলামত, তাতে স্মরণকালের ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে। শুধু বাংলাদেশেই নয়, উপমহাদেশসহ বিশ্বের অন্যান্য দেশেও বন্যার আশঙ্কা রয়েছে। এতে বিশ্বজুড়ে বিশেষ করে অনুন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলো তীব্র অর্থনৈতিক ও খাদ্যসংকটে পড়বে। কোটি কোটি মানুষ উদ্বাস্তু ও দুর্ভিক্ষের শিকার হবে। আবহাওয়ার উষ্ণায়ন এবং পরিবর্তনজনিত কারণে এক মহাপ্রাকৃতিক বিপর্যয় ধেয়ে আসছে। অথচ যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা বিশ্ব বলতে গেলে নির্বিকার। এ নিয়ে লোকদেখানো সম্মেলন ও নামকাওয়াস্তে কথাবার্তা বললেও কার্যকর কোনো উদ্যোগ নিচ্ছে না। তারা আছে যুদ্ধ-বিগ্রহ নিয়ে। আফগানিস্তান, ইরাক, সিরিয়াসহ অন্যান্য দেশে মানুষ মারার জন্য ট্রিলিয়ন ট্রিলিয়ন ডলার খরচ করলেও মানুষ বাঁচানোর কোনো উদ্যোগ নিচ্ছে না। উল্টো অস্ত্র বিক্রির ধান্ধায় ইউক্রেন যুদ্ধ জিইয়ে রেখে মানবতার জন্য মায়াকান্না কাঁদছে। ইউক্রেনের মানুষের জন্য তাদের উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার শেষ নেই। ফ্রান্স, জার্মানি, ইটালির সরকার প্রধানরা ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভে গিয়ে জেলনস্কির সাথে সহমর্মিতা প্রকাশ করছে। অথচ আমাদের মতো দেশে লাখ লাখ মানুষ বন্যায় ও প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের শিকার হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করলেও সেদিকে তাদের কোনো খেয়াল নেই। তাদের মানবতা একপেশে, পূর্ণাঙ্গ নয়। এর কারণ বুঝতে অসুবিধা হয় না। পশ্চিমাবিশ্ব শুধু শ্বেতাঙ্গদের স্বার্থ রক্ষার একতরফা নীতি নিয়ে আছে। শ্বেতাঙ্গদের কোনো সমস্যা হলেই তাদের আবেগ উৎলে উঠে। তথাকথিত মানবতা জেগে উঠে। তারা বিশ্বে শ্বেতাঙ্গদের আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করতে চায়। বিশ্বে শুধু তারাই টিকে থাকবে, অন্যদের প্রয়োজন নেইÑএমন এক বিষম নীতি অবলম্বন করে চলেছে। তা নাহলে, ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধ করার উদ্যোগ না নিয়ে রাশিয়ার ওপর একের পর এক নিষেধাজ্ঞা দিয়ে বিশ্ব অর্থনীতিকে কেন সংকটের দিকে ঠেলে দেয়া হচ্ছে? উন্নয়নশীল দেশগুলোকে কেন অর্থনৈতিক ভঙ্গুরতার দিকে ঠেলে দিচ্ছে? গত শুক্রবার সেন্ট পিটার্সবার্গ ইন্টারন্যাশনাল ইকোনোমিক ফোরাম-এর প্লেনারি সেশনে বক্তব্য রাখতে গিয়ে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন যথার্থই বলেছেন, ‘পশ্চিমাবিশ্ব এক নতুন ওয়ার্ল্ড অর্ডার তৈরি করতে চাচ্ছে, যেখানে শুধু শক্তিধর দেশ টিকে থাকবে। পশ্চিমা এলিট শ্রেণী মনে করছে, তাদের আধিপত্যবাদ অপরিবর্তনীয় ও চিরস্থায়ী। তবে তারা এটা ভাবে না, কোনো কিছুই চিরস্থায়ী নয়।’ বলার অপেক্ষা রাখে না, পশ্চিমা বিশ্বের সিংহভাগ মানুষই শ্বেতাঙ্গ। যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমাবিশ্বের এই একচোখা শ্বেতাঙ্গনীতির কারণে বিশ্বে আজ চরম অর্থনৈতিক সংকট ও বিপর্যয়ের মুখোমুখি। এমনকি তাদের নিজেদের দেশের জনগণকেও সংকটের মধ্যে ফেলে দিয়ে তারা তাদের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করছে। এর সাথে যুক্ত হয়েছে প্রাকৃতিক দুর্যোগ। এমন সংকটজনক পরিস্থিতি উত্তরণে তাদের সদিচ্ছা বলতে কিছু নেই।
বন্যা মানুষের সবকিছু ভাসিয়ে নেয়। নিঃস্ব করে দেয়। দেশে যে বন্যা দেখা দিয়েছে, তা দীর্ঘস্থায়ী হলে ভয়াবহ অর্থনৈতিক ও মানবিক বিপর্যয় দেখা দেবে। তার আলামত ইতোমধ্যে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। এ প্রেক্ষিতে, যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা বিশ্বের এদিকে দৃষ্টি দেয়া মানবিক কর্তব্য। জলবায়ু পরিবর্তনজনিত সমস্যা নিরসনে তাদের উদাসীনতা ও কার্যকর উদ্যোগের অভাবেই বিশ্বজুড়ে প্রাকৃতিক বিপর্যয় দেখা দিচ্ছে। এর দায় তারা এড়াতে পারে না। প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর সহায়তায় পশ্চিমাবিশ্বকে এগিয়ে আসতে হবে। তাদের উচিৎ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত বাংলাদেশের পাশে দাঁড়ানো। ওআইসিসহ মুসলিম বিশ্বকেও সহায়তার হাত প্রসারিত করতে হবে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে কূটনৈতিক তৎপরতা চালিয়ে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশ ও মুসলিম বিশ্বের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে হবে। সরকারের তরফে এখনই বন্যার্তদের সহযোগিতায় দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে। পানিবন্দীদের দ্রুত উদ্ধার করতে হবে। তাদের জন্য খাদ্য, আশ্রয়, ওষুধ, বিশুদ্ধ পানিসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য নিশ্চিত করতে হবে। বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও ধনিক শ্রেণীকেও ত্রাণ কার্যে এগিয়ে আসতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।